≡ মোস্তফা বাবুল ≡
জামালপুর থেকে প্রকাশিত স্থানীয় পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদকদের মাঝে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর একটি পত্র প্রেরণের পরিপ্রেক্ষিতে এই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পত্রটি সাংবাদিক মহলে বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, স্থানীয় পত্রিকাগুলোর উপর জেলা প্রশাসন হঠাৎ করে খড়্গহস্ত হলো? সরকারের উপরের মহল থেকে এমন কোনো আদেশ কি দেওয়া হয়েছে যে, যার প্রেক্ষিতে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার জন্য জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়েছে? নেপথ্যের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু জানা না গেলেও এই উদ্যোগের পেছনে হয়তো হীনস্বার্থ অথবা চক্রান্ত রয়েছে- প্রক্রিয়াটি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার একটি অপপ্রয়াস বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন থেকে স্থানীয় পত্রিকাগুলোর একটি হালনাগাদ তথ্য বিবরণী প্রকাশ করা হয়েছে। সেই তথ্য বিবরণীটি অসম্পূর্ণ এবং বিভ্রান্তিকর। এ যাবত কতগুলো পত্রিকার ডিক্লারেশন প্রদান করা হয়েছে, কতগুলো দৈনিক, কতগুলো সাপ্তাহিক, কতগুলো মাসিক, ত্রৈমাসিক অথবা ষান্মাসিক পত্রিকার রয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ইতোমধ্যে যে তথ্য বিবরণীটি হাতে এসেছে, তাতে রয়েছে অসঙ্গতি এবং সেটা গোঁজামিলের তথ্য বিবরণী। পত্রিকাগুলোর সঠিক কোনো তথ্য নেই তাতে। পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ রয়েছে তার নাম নেই এবং নিয়মিত পত্রিকাকে অনিয়মিত এবং অনিয়মিত পত্রিকাকে নিয়মিত পত্রিকা হিসাবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গোঁজামিলের তথ্যের উপর ভিত্তি করে কিছু পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদককে কারণ দর্শানোর পত্র দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর ওই পত্রে বলা হয়েছে, ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন ১৯৭৩ এর ২৬ ধারা মোতাবেক প্রত্যেক সংবাদপত্রের মুদ্রাকরকে সংবাদপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার চার কপি জমা দেওয়ার বিধান থাকলেও আপনার পত্রিকা অত্রাফিসে নিয়মিত জমা দেওয়া হচ্ছে না ফলে প্রতীয়মান হয় যে, আপনার পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আপনার পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত না হওয়ার কারণে ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন ১৯৭৩ এর ৯(৩) ধারা মোতাবেক কেন আপনার পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হবে না তার কারণ পত্র প্রাপ্তির তিন কার্যদিবসের মধ্যে জানানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। পত্রের সঙ্গে হালনাগাদ তথ্য প্রদানের জন্য একটি ছকও সংযুক্ত রয়েছে।
পত্র পাঠের পর এটাই প্রতীয়মান হয়েছে যে, ওয়ান ইলেভেনের ভূত যেন জেলা প্রশাসনের উপর পুনরায় আছড় করেছে। বিগত সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেনের সরকারের আমলে বিশেষ ব্যক্তির প্ররোচণায় বেছে বেছে স্থানীয় কিছু পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই পত্রিকাগুলো ডিক্লারেশন নিয়ে পুনরায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। যদিও নতুন করে ডিক্লারেশন নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না কেননা একটি পত্রিকার সম্পাদক হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করলে ওই আদেশ স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল। ডিক্লারেশন বাতিলের সেই আদেশের কারণে পত্রিকাগুলোর প্রকাশনা বন্ধ রাখা হয়েছিল, সে কারণে আইনের ৯(৩) ধারার বিধান মোতাবেক পুনরায় পত্রিকা প্রকাশের জন্য ডিক্লারেশন নিতে হয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইনের ৯(৩) ধারায় কি পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে? না এই ধারায় পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার বিধান উল্লেখ রয়েছে?
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার বাকশাল গঠনকালে এক আদেশ বলে চারটি পত্রিকা বাদে সকল পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যে আইন বলে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সেটা একটি কালো আইন হিসাবে খ্যাত। সাংবাদিক সমাজ আইনটিকে একটিকে কালো আইন হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। পরবর্তী সরকারের আমলে আইনটি রদ করা হয় এবং পুনরায় পত্রিকা প্রকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়। স্বৈরাচার এরশাদ সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার অভিলাষে পত্রিকার ডিক্লারেশন প্রদানে কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিলেন। গণঅভ্যুত্থানে তার পতনের পর বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেই বিধি-নিষেধ তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেই থেকে ১৯৭৩ সালের ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইনটিই বর্তমানে বলবৎ রয়েছে।
প্রশাসনের নিকট প্রশ্ন, দেশে কি সেনাসমর্থিত সরকার আছে, না সামরিক স্বৈরতন্ত্র কায়েম হয়েছে? বর্তমান সরকারকে বলা হয়ে থাকে মিডিয়াবান্ধব সরকার। এই সরকারের আমলে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। রেকর্ড সংখ্যক টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স এবং সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন প্রদান করা হয়েছে। এখনও প্রত্যেক দিন নতুন নামে নতুন নতুন পত্রিকা বাজারে আসছে এবং টেলিভিশন অনইয়ার হচ্ছে। এমতাবস্থায় জামালপুরের মতো একটি বর্ধিষ্ণু জেলা শহর থেকে প্রকাশিত পত্রিকারগুলোর উপর খড়গহস্ত হলো কেন প্রশাসন? কার শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে জেলার পত্রিকাগুলোর উপর? ১৯৭৪ সালের সেই কালো আইনটি কি পুনর্জীবিত হয়েছে, না তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে? কিসের ভিত্তিতে অথবা কোন আইনের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন তথাকথিত অনিয়মিত পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের উদ্যোগী হয়েছে? ডিক্লারেশন বাতিলের পদ্ধতি সম্পর্কে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কি ওয়াকিবহাল নন? নাকি কোনো মহল বা ব্যক্তির প্ররোচণায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এহেন উদ্যোগী হয়েছেন?
অনিয়মিত পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা যাবে আইনের কোন ধারায় সেটা উল্লেখ আছে? অনিয়মিত পত্রিকা সংজ্ঞাই বা কি? আইনের ৯ ধারায় সংবাদপত্র প্রকাশ না করার প্রতিক্রিয়া বর্ণিত রয়েছে। ৯ ধারার ৩ উপরাধায় পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে যদি- কোনও দৈনিক পত্রিকা তিন মাস এবং সাপ্তাহিক বা অন্য কোনো পত্রিকার ক্ষেত্রে ছয় মাস বন্ধ থাকে তাহলে ঘোষণাপত্র অর্থাৎ ডিক্লারেশন ‘বাতিল হয়ে যাবে’ এবং মুদ্রাকর ও প্রকাশক পত্রিকাটি পুনরায় প্রকাশের আগে ৭ ধারার আওতায় নতুন করে ঘোষণা ও স্বাক্ষর দেবেন। এই ধারায় সুস্পষ্টভাবে পত্রিকা বন্ধ রাখলে পরবর্তীতে প্রকাশের জন্য নতুন করে ঘোষণাপত্র প্রমাণীকরণের বিধান রয়েছে। ‘ঘোষণাপত্র বাতিল হয়ে যাবে’ তার মানে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার বিধান নয়। ডিক্লারেশন বাতিল হয়ে যাওয়া এবং ডিক্লাবেশন বাতিল করার বিধান এক নয়। ৯ এর ৩ উপধারা অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বপ্রণোদিত হয়ে কথিত অনিয়মিত পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার এখতিয়ার রাখেন না। কেননা ১৯৭৩ সালের ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইনে ‘ঘোষণাপত্র বাতিল হয়ে যাবে’ এবং ঘোষণাপত্র প্রমাণীকরণ বাতিল করা একই ধরনের কার্যকারিতাকে বোঝানো হয়নি। যদি সেটাই হতো তাহলে আইনের ২০ ধারায় ডিক্লারেশন অর্থাৎ ঘোষণাপত্র প্রমাণীকরণ বাতিলের জন্য পৃথক বিধান থাকার কি প্রয়োজন আছে? আইনের ৯(৩) ধারার বিধানের অপব্যাখ্যা করে কথিত অনিয়মিত পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়া সোজা কথায় উদ্দেশ্যমূলক। হয়তো কোনো মহল বা ব্যক্তির উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বপ্রণোদিত হয়ে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের উদ্যোগী হয়েছেন! আইনের ৯(৩) ধারা কোনোভাবেই অনিয়মিত পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার জন্য প্রযোজ্য নয়। বরং এই ধারাটি মূলত একাধিকক্রমে তিন মাস বা ছয় মাস পর্যন্ত পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ রাখার প্রতিক্রিয়া মাত্র।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কি পত্রিকার ঘোষণাপত্র প্রমাণীকরণ ইংরেজিতে বলা হয় ডিক্লারেশন বাতিল করার এখতিয়ার রাখেন না? অবশ্যই রাখেন। আইনের ২০ ধারায় ঘোষণাপত্র প্রমাণীকরণ বাতিলের বিধান রয়েছে। এই ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ধারা ১২ এর আওতায় কোনো ঘোষণা প্রমাণীকরণ করেন, তিনি যদি প্রমাণীকরণ পরবর্তী কোনো সময়ে নিশ্চিত হন যে- (ক) মালিক, মুদ্রাকর কিংবা মালিক বা প্রকাশক এখন আর বাংলাদেশের নাগরিক নন; (খ) মুদ্রাকর কিংবা প্রকাশক নৈতিক চরিত্রহীনতা সংক্রান্ত কোনো অপরাধের জন্যে দন্ডিত হয়েছেন; (গ) মুদ্রাকর কিংবা প্রকাশক আদালতের দৃষ্টিতে উন্মাদ বা অপ্রকৃতিস্থ প্রমাণিত হয়েছেন; কিংবা মালিক বা প্রকাশকের সংবাদপত্রটি নিয়মিতভাবে প্রকাশ করার জন্যে প্রয়োজনীয় আর্থিক সামর্থ্য নেই; তাহলে তিনি কারণগুলো উল্লেখপূর্বক লিখিত আদেশ দ্বারা ঘোষণাপত্রের প্রমাণীকরণ বাতিল করে দিতে পারেন। তবে শর্ত থাকে যে, যে ব্যক্তি ঘোষণা প্রদান করেছেন, তাকে তার বক্তব্য পেশের যুক্তিসঙ্গত সুযোগ না দিয়ে এ ধরনের আদেশ প্রদান করা যাবে না।
উল্লিখিত কারণ ছাড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার কোনো এখতিয়ার আছে বলে বিদ্যমান আইনে প্রতীয়মান হয় না। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ২৬ ধারা উল্লেখ করে যে পত্র দিয়েছেন- সে ব্যাপারে তার করণীয় কি সেটাও আইনের ৩৫ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, ২৬ ধারা অনুযায়ী পত্রিকার কপি সরবরাহ না করলে, যে কর্মকর্তার কাছে এসব কপি সরবরাহ করার কথা ছিল তার, কিংবা ওই কর্তকর্তা কর্তৃক অনুমোদিত কোনো ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে মুদ্রাকরের জরিমানা হতে পারে, যার পরিমাণ প্রত্যেক ব্যর্থতার জন্যে পাঁচশ টাকা হতে পারে। অর্থাৎ ২৬ ধারা অনুযায়ী পত্রিকার কপি সরবরাহ না করলে জরিমানার বিধান রয়েছে, কোনো মতেই ডিক্লারেশন বাতিল করার সঙ্গে এই ধারাটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সুতরাং ৯(৩) ধারার সঙ্গে এই ২৬ ধারাটি কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়। আইনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একজন কর্মকর্তা নিয়োগ করতে পারেন ৩৭ ধারার বিধান অনুযায়ী। ৩৭ ধারা অনুযায়ী পত্রিকার প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তদারকি করার জন্য কোনো কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি? জানা মতে ৩৭ ধারা মোতাবেক কোনো কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হলে অবশ্যই বিজ্ঞপ্তি প্রদান করতে হবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ ধরনের কোনো কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন মর্মে এখন পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেননি। পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদকেরাও অবহিত নন।
আইনের ২৬ ধারা উল্লেখ করে ৯(৩) ধারা অনুযায়ী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার মর্মে যে কারণ দর্শানোর পত্র দিয়েছেন সেটা আইনের অপপ্রয়োগ বলে প্রতীয়মান হয়েছে। পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের জন্য পত্রিকার নিয়মিত প্রকাশিত হয় কিনা সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়; দৈনিক হলে তিন মাস এবং সাপ্তাহিক বা অন্য পত্রিকার ক্ষেত্রে ছয় মাস বন্ধ থাকলে সংশ্লিষ্ট পত্রিকার ঘোষণাপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে- সে ক্ষেত্রে প্রকাশকের পুনরায় ঘোষণাপত্র প্রমাণীকরণের প্রয়োজন হবে। সুতরাং আইনের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য অনুধাবন এবং যথাযথভাবে অনুসরণ না করে আইন প্রয়োগ করা মোটেও সমীচিন নয়। বিশেষ কোনো মহল বা ব্যক্তির ইন্ধনে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার মতো একটি স্পর্শকাতর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়ে থাকলে সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক বলা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। মামলার ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের। উপরন্তু প্রেস কাউন্সিলে সংক্ষুব্ধ কেউ আপিল করলে ৯(৩) ধারায় কোনো পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের আদেশ ধোপে টিকবে না। উল্টো জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আপিল কর্তৃপক্ষ দ্বারা ভর্ৎসনার স্বীকার হতে পারেন।
অতএব মুদ্রাণালয়, পুস্তক, সংবাদপত্র প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে দায়িত্ব পালন এবং ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য আইনের ৩৭ ধারার বিধান অনুযায়ী যথাযথ কর্মকর্তা নিয়োগ করাই হবে শ্রেয় এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রথম কাজ। তদুপরি ২৬ ধারা অনুযায়ী বিনামূল্যে চার কপি পত্রিকা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট জমা না দিলে তার জন্য জরিমানার বিধানটি কার্যকর হলে সকল অনিয়ম দূর হবে এবং পত্রিকার প্রকাশনা গতিশীল হবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
≡ মোস্তফা বাবুল : সম্পাদক, দৈনিক জয়পতাকা।
জামালপুর থেকে প্রকাশিত স্থানীয় পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদকদের মাঝে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর একটি পত্র প্রেরণের পরিপ্রেক্ষিতে এই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পত্রটি সাংবাদিক মহলে বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, স্থানীয় পত্রিকাগুলোর উপর জেলা প্রশাসন হঠাৎ করে খড়্গহস্ত হলো? সরকারের উপরের মহল থেকে এমন কোনো আদেশ কি দেওয়া হয়েছে যে, যার প্রেক্ষিতে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার জন্য জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়েছে? নেপথ্যের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু জানা না গেলেও এই উদ্যোগের পেছনে হয়তো হীনস্বার্থ অথবা চক্রান্ত রয়েছে- প্রক্রিয়াটি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার একটি অপপ্রয়াস বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন থেকে স্থানীয় পত্রিকাগুলোর একটি হালনাগাদ তথ্য বিবরণী প্রকাশ করা হয়েছে। সেই তথ্য বিবরণীটি অসম্পূর্ণ এবং বিভ্রান্তিকর। এ যাবত কতগুলো পত্রিকার ডিক্লারেশন প্রদান করা হয়েছে, কতগুলো দৈনিক, কতগুলো সাপ্তাহিক, কতগুলো মাসিক, ত্রৈমাসিক অথবা ষান্মাসিক পত্রিকার রয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ইতোমধ্যে যে তথ্য বিবরণীটি হাতে এসেছে, তাতে রয়েছে অসঙ্গতি এবং সেটা গোঁজামিলের তথ্য বিবরণী। পত্রিকাগুলোর সঠিক কোনো তথ্য নেই তাতে। পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ রয়েছে তার নাম নেই এবং নিয়মিত পত্রিকাকে অনিয়মিত এবং অনিয়মিত পত্রিকাকে নিয়মিত পত্রিকা হিসাবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গোঁজামিলের তথ্যের উপর ভিত্তি করে কিছু পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদককে কারণ দর্শানোর পত্র দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর ওই পত্রে বলা হয়েছে, ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন ১৯৭৩ এর ২৬ ধারা মোতাবেক প্রত্যেক সংবাদপত্রের মুদ্রাকরকে সংবাদপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার চার কপি জমা দেওয়ার বিধান থাকলেও আপনার পত্রিকা অত্রাফিসে নিয়মিত জমা দেওয়া হচ্ছে না ফলে প্রতীয়মান হয় যে, আপনার পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আপনার পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত না হওয়ার কারণে ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন ১৯৭৩ এর ৯(৩) ধারা মোতাবেক কেন আপনার পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হবে না তার কারণ পত্র প্রাপ্তির তিন কার্যদিবসের মধ্যে জানানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। পত্রের সঙ্গে হালনাগাদ তথ্য প্রদানের জন্য একটি ছকও সংযুক্ত রয়েছে।
পত্র পাঠের পর এটাই প্রতীয়মান হয়েছে যে, ওয়ান ইলেভেনের ভূত যেন জেলা প্রশাসনের উপর পুনরায় আছড় করেছে। বিগত সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেনের সরকারের আমলে বিশেষ ব্যক্তির প্ররোচণায় বেছে বেছে স্থানীয় কিছু পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই পত্রিকাগুলো ডিক্লারেশন নিয়ে পুনরায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। যদিও নতুন করে ডিক্লারেশন নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না কেননা একটি পত্রিকার সম্পাদক হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করলে ওই আদেশ স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল। ডিক্লারেশন বাতিলের সেই আদেশের কারণে পত্রিকাগুলোর প্রকাশনা বন্ধ রাখা হয়েছিল, সে কারণে আইনের ৯(৩) ধারার বিধান মোতাবেক পুনরায় পত্রিকা প্রকাশের জন্য ডিক্লারেশন নিতে হয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইনের ৯(৩) ধারায় কি পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে? না এই ধারায় পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার বিধান উল্লেখ রয়েছে?
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার বাকশাল গঠনকালে এক আদেশ বলে চারটি পত্রিকা বাদে সকল পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যে আইন বলে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সেটা একটি কালো আইন হিসাবে খ্যাত। সাংবাদিক সমাজ আইনটিকে একটিকে কালো আইন হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। পরবর্তী সরকারের আমলে আইনটি রদ করা হয় এবং পুনরায় পত্রিকা প্রকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়। স্বৈরাচার এরশাদ সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার অভিলাষে পত্রিকার ডিক্লারেশন প্রদানে কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিলেন। গণঅভ্যুত্থানে তার পতনের পর বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেই বিধি-নিষেধ তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেই থেকে ১৯৭৩ সালের ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইনটিই বর্তমানে বলবৎ রয়েছে।
প্রশাসনের নিকট প্রশ্ন, দেশে কি সেনাসমর্থিত সরকার আছে, না সামরিক স্বৈরতন্ত্র কায়েম হয়েছে? বর্তমান সরকারকে বলা হয়ে থাকে মিডিয়াবান্ধব সরকার। এই সরকারের আমলে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। রেকর্ড সংখ্যক টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স এবং সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন প্রদান করা হয়েছে। এখনও প্রত্যেক দিন নতুন নামে নতুন নতুন পত্রিকা বাজারে আসছে এবং টেলিভিশন অনইয়ার হচ্ছে। এমতাবস্থায় জামালপুরের মতো একটি বর্ধিষ্ণু জেলা শহর থেকে প্রকাশিত পত্রিকারগুলোর উপর খড়গহস্ত হলো কেন প্রশাসন? কার শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে জেলার পত্রিকাগুলোর উপর? ১৯৭৪ সালের সেই কালো আইনটি কি পুনর্জীবিত হয়েছে, না তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে? কিসের ভিত্তিতে অথবা কোন আইনের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন তথাকথিত অনিয়মিত পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের উদ্যোগী হয়েছে? ডিক্লারেশন বাতিলের পদ্ধতি সম্পর্কে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কি ওয়াকিবহাল নন? নাকি কোনো মহল বা ব্যক্তির প্ররোচণায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এহেন উদ্যোগী হয়েছেন?
অনিয়মিত পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা যাবে আইনের কোন ধারায় সেটা উল্লেখ আছে? অনিয়মিত পত্রিকা সংজ্ঞাই বা কি? আইনের ৯ ধারায় সংবাদপত্র প্রকাশ না করার প্রতিক্রিয়া বর্ণিত রয়েছে। ৯ ধারার ৩ উপরাধায় পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে যদি- কোনও দৈনিক পত্রিকা তিন মাস এবং সাপ্তাহিক বা অন্য কোনো পত্রিকার ক্ষেত্রে ছয় মাস বন্ধ থাকে তাহলে ঘোষণাপত্র অর্থাৎ ডিক্লারেশন ‘বাতিল হয়ে যাবে’ এবং মুদ্রাকর ও প্রকাশক পত্রিকাটি পুনরায় প্রকাশের আগে ৭ ধারার আওতায় নতুন করে ঘোষণা ও স্বাক্ষর দেবেন। এই ধারায় সুস্পষ্টভাবে পত্রিকা বন্ধ রাখলে পরবর্তীতে প্রকাশের জন্য নতুন করে ঘোষণাপত্র প্রমাণীকরণের বিধান রয়েছে। ‘ঘোষণাপত্র বাতিল হয়ে যাবে’ তার মানে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার বিধান নয়। ডিক্লারেশন বাতিল হয়ে যাওয়া এবং ডিক্লাবেশন বাতিল করার বিধান এক নয়। ৯ এর ৩ উপধারা অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বপ্রণোদিত হয়ে কথিত অনিয়মিত পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার এখতিয়ার রাখেন না। কেননা ১৯৭৩ সালের ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইনে ‘ঘোষণাপত্র বাতিল হয়ে যাবে’ এবং ঘোষণাপত্র প্রমাণীকরণ বাতিল করা একই ধরনের কার্যকারিতাকে বোঝানো হয়নি। যদি সেটাই হতো তাহলে আইনের ২০ ধারায় ডিক্লারেশন অর্থাৎ ঘোষণাপত্র প্রমাণীকরণ বাতিলের জন্য পৃথক বিধান থাকার কি প্রয়োজন আছে? আইনের ৯(৩) ধারার বিধানের অপব্যাখ্যা করে কথিত অনিয়মিত পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়া সোজা কথায় উদ্দেশ্যমূলক। হয়তো কোনো মহল বা ব্যক্তির উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বপ্রণোদিত হয়ে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের উদ্যোগী হয়েছেন! আইনের ৯(৩) ধারা কোনোভাবেই অনিয়মিত পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার জন্য প্রযোজ্য নয়। বরং এই ধারাটি মূলত একাধিকক্রমে তিন মাস বা ছয় মাস পর্যন্ত পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ রাখার প্রতিক্রিয়া মাত্র।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কি পত্রিকার ঘোষণাপত্র প্রমাণীকরণ ইংরেজিতে বলা হয় ডিক্লারেশন বাতিল করার এখতিয়ার রাখেন না? অবশ্যই রাখেন। আইনের ২০ ধারায় ঘোষণাপত্র প্রমাণীকরণ বাতিলের বিধান রয়েছে। এই ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ধারা ১২ এর আওতায় কোনো ঘোষণা প্রমাণীকরণ করেন, তিনি যদি প্রমাণীকরণ পরবর্তী কোনো সময়ে নিশ্চিত হন যে- (ক) মালিক, মুদ্রাকর কিংবা মালিক বা প্রকাশক এখন আর বাংলাদেশের নাগরিক নন; (খ) মুদ্রাকর কিংবা প্রকাশক নৈতিক চরিত্রহীনতা সংক্রান্ত কোনো অপরাধের জন্যে দন্ডিত হয়েছেন; (গ) মুদ্রাকর কিংবা প্রকাশক আদালতের দৃষ্টিতে উন্মাদ বা অপ্রকৃতিস্থ প্রমাণিত হয়েছেন; কিংবা মালিক বা প্রকাশকের সংবাদপত্রটি নিয়মিতভাবে প্রকাশ করার জন্যে প্রয়োজনীয় আর্থিক সামর্থ্য নেই; তাহলে তিনি কারণগুলো উল্লেখপূর্বক লিখিত আদেশ দ্বারা ঘোষণাপত্রের প্রমাণীকরণ বাতিল করে দিতে পারেন। তবে শর্ত থাকে যে, যে ব্যক্তি ঘোষণা প্রদান করেছেন, তাকে তার বক্তব্য পেশের যুক্তিসঙ্গত সুযোগ না দিয়ে এ ধরনের আদেশ প্রদান করা যাবে না।
উল্লিখিত কারণ ছাড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার কোনো এখতিয়ার আছে বলে বিদ্যমান আইনে প্রতীয়মান হয় না। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ২৬ ধারা উল্লেখ করে যে পত্র দিয়েছেন- সে ব্যাপারে তার করণীয় কি সেটাও আইনের ৩৫ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, ২৬ ধারা অনুযায়ী পত্রিকার কপি সরবরাহ না করলে, যে কর্মকর্তার কাছে এসব কপি সরবরাহ করার কথা ছিল তার, কিংবা ওই কর্তকর্তা কর্তৃক অনুমোদিত কোনো ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে মুদ্রাকরের জরিমানা হতে পারে, যার পরিমাণ প্রত্যেক ব্যর্থতার জন্যে পাঁচশ টাকা হতে পারে। অর্থাৎ ২৬ ধারা অনুযায়ী পত্রিকার কপি সরবরাহ না করলে জরিমানার বিধান রয়েছে, কোনো মতেই ডিক্লারেশন বাতিল করার সঙ্গে এই ধারাটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সুতরাং ৯(৩) ধারার সঙ্গে এই ২৬ ধারাটি কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়। আইনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একজন কর্মকর্তা নিয়োগ করতে পারেন ৩৭ ধারার বিধান অনুযায়ী। ৩৭ ধারা অনুযায়ী পত্রিকার প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তদারকি করার জন্য কোনো কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি? জানা মতে ৩৭ ধারা মোতাবেক কোনো কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হলে অবশ্যই বিজ্ঞপ্তি প্রদান করতে হবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ ধরনের কোনো কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন মর্মে এখন পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেননি। পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদকেরাও অবহিত নন।
আইনের ২৬ ধারা উল্লেখ করে ৯(৩) ধারা অনুযায়ী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার মর্মে যে কারণ দর্শানোর পত্র দিয়েছেন সেটা আইনের অপপ্রয়োগ বলে প্রতীয়মান হয়েছে। পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের জন্য পত্রিকার নিয়মিত প্রকাশিত হয় কিনা সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়; দৈনিক হলে তিন মাস এবং সাপ্তাহিক বা অন্য পত্রিকার ক্ষেত্রে ছয় মাস বন্ধ থাকলে সংশ্লিষ্ট পত্রিকার ঘোষণাপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে- সে ক্ষেত্রে প্রকাশকের পুনরায় ঘোষণাপত্র প্রমাণীকরণের প্রয়োজন হবে। সুতরাং আইনের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য অনুধাবন এবং যথাযথভাবে অনুসরণ না করে আইন প্রয়োগ করা মোটেও সমীচিন নয়। বিশেষ কোনো মহল বা ব্যক্তির ইন্ধনে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করার মতো একটি স্পর্শকাতর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়ে থাকলে সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক বলা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। মামলার ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের। উপরন্তু প্রেস কাউন্সিলে সংক্ষুব্ধ কেউ আপিল করলে ৯(৩) ধারায় কোনো পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের আদেশ ধোপে টিকবে না। উল্টো জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আপিল কর্তৃপক্ষ দ্বারা ভর্ৎসনার স্বীকার হতে পারেন।
অতএব মুদ্রাণালয়, পুস্তক, সংবাদপত্র প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে দায়িত্ব পালন এবং ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য আইনের ৩৭ ধারার বিধান অনুযায়ী যথাযথ কর্মকর্তা নিয়োগ করাই হবে শ্রেয় এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রথম কাজ। তদুপরি ২৬ ধারা অনুযায়ী বিনামূল্যে চার কপি পত্রিকা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট জমা না দিলে তার জন্য জরিমানার বিধানটি কার্যকর হলে সকল অনিয়ম দূর হবে এবং পত্রিকার প্রকাশনা গতিশীল হবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
≡ মোস্তফা বাবুল : সম্পাদক, দৈনিক জয়পতাকা।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন!