মনন মাহাদি (ছবিটি ১১ আগস্ট, রবিবার রাতে তোলা) |
ঈদুল আজহা চলে গেল ১২ আগস্ট সোমবার। অন্যান্য দিনের মতই বোধ হয় চলে গেল। সকাল পাঁচটা ছাপ্পান্ন মিনিটে এলার্ম দিয়ে রাখলেও, আরেকটু ঘুমিয়ে নেই করতে করতে, আম্মা আর দাদুর ডাকাডাকিতে উঠলাম সাতটা পঞ্চাশ মিনিটের দিকে।
কয়েক বছর ধরে দাদুর সাথে ঈদগাহে যাওয়া হয় না। এবার সাথে যাবই সংকল্প করলেও, দাঁতমাজা, টয়লেট, গোসল করে তৈরি হতে হতেই দাদু চলে গেছিল। পরে ছোট চাচ্চুর সাথে দড়িপাড়া মসজিদে গেলাম। গরম ছিল বেশ। ঘেমে নেয়ে ভিজে গেছিলাম। ছাদের উপর প্রাকৃতিক বাতাস ছিল।
নামাজ শেষ করে আসার সময় আবু সাঈদের সাথে দেখা হলো। ঈদ মোবারক শুভেচ্ছা ও কোলাকুলি করলাম। কিছু কুশল বিনিময়ও হলো। পিটিআই মোড়ে সাজুর সাথে দেখা হলো। আরো অনেকের সাথে দেখা হলেও কেমন যেন ইতস্তত অনুভব করলাম।
টিভি দেখি না বহু বছর হলো। ফেসবুকে হুদাই হুদাই স্ক্রলিং করলাম। ছবি, স্ট্যাটাস পড়ে হতাশা বাড়ালাম। মেসেঞ্জার দুইদিন ধরে আনইন্সট্রল করে রেখেছি। ইউটুবে নাটক, অ্যানিমেশন কিছু দেখলাম মনে হয়। বিকেলে সম্ভবত ঘুমিয়েও পড়েছিলাম।
সন্ধ্যার দিকে কফি বানিয়ে খেলাম। ছোট চাচ্চু ফোন করলো, পশ্চিমপাড়া সমাজের গোসত আনতে যাবো কিনা। তৈরি হয়ে জানালাম যাবো। রশিদ নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মসজিদের দিকে গেলাম। বউবাজার মোড়ে ফরিদের সাথে দেখা হয়ে গেল। কোলাকুলি, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হলো। ফরিদ জানালো সেখানে রবিন, সেলিম এরা আছে।
গিয়ে দেখি শুধু খাসির গোসত আছে। রবিনের সাথে দেখা হলো। রবিন আমাকে তাদের বাসায় যেতে বললো। পরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দুইজন একসাথেই গেলাম। পথে চাচ্চুর সাথে দেখা হয়ে গেল, অটো নিয়ে মসজিদের দিকে যাচ্ছিল। পরে চাচ্চুকে ব্যাগ দিয়ে দিলাম। রবিনই বলে দিল মনন একটু পরে যাবে।
রবিনরা কোরবানি দিয়েছে। আমার জন্য কোরবানির গোসত রেখে দিয়েছিল। সেটা দেওয়ার জন্যই মূলত নিয়ে গেল। তারপর রবিনের আম্মা রান্না করা গোসতও খেতে দিলেন। কম করে খেলাম।
রবিনদের অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। রবিনও সফল, আমার দৃষ্টিতে। তার বাবা তাকে পড়াতেই চাননি। সেই ছেলে অনার্স মাস্টার্স পাস করে ফেলেছে। বাড়িও মোটামুটি সুন্দর করেছে। সামনে দোকান দিয়েছে। রান্না করা খাবারও বিক্রি করেন তার মা। তাদের বাসার পাশের ভবনটি পুরো নিয়েছে ওয়ার্ল্ড ভিশন। এখানে কাজ করে এমন কয়েকজনকে তাদের বাসাও ভাড়া দিয়েছে। এরাও মূলত খাবার খায়।
মোটামুটি বিস্ময় নিয়েই বাসায় ফিরে আসলাম। রবিনের সাথে একটা সেলফি নিতে পারলে ভালো হতো। পরে আর বলা হয়নি।
রাতে মেধা আমার মোবাইলে ইউটুব দেখলো। আমি চিকিৎসক তারিক মেহেরের কাব্যগ্রন্থ ‘শুভগ্রাম খুব দূরে নয়’ থেকে কিছু কবিতা পাঠ করলাম। সারাদিন তপ্ত দিনের পর রাতে বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা স্বস্তির পরশ পাওয়া গেল।
রাতে ঘুমানোর আগে কয়েকদিন যাবৎ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মরণের ডঙ্কা বাজে’ কিশোর উপন্যাসটি পড়ছি। এদিনও কিছু পাতা পড়া গেল। রাতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না।
আর এভাবেই ঈদের দিনটা মোটামুটি ছুটির আমেজেই কাটলো বলা যায়।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন!