জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদারের বিরুদ্ধে উঠা নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হুমকির শিকার হয়েছেন সাংবাদিক কাফি পারভেজ। সাংবাদিক কাফি পারভেজসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদার গা ঢাকা দেন। আত্মগোপনে থাকার পর কতিপয় সুবিধাভোগী লোকজনের সহায়তায় ১৮ আগস্ট রবিবার বেলা প্রায় ১১টার দিকে আকস্মিক কলেজে যান অধ্যক্ষ বজলুল করিম তালুকদার। তিনি মাত্র ৩১ মিনিট কলেজে অবস্থান করেন এবং হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই দ্রুত কেটে পড়েন। একই কায়দায় তিনি ১৯ আগস্ট সোমবার সকালে কলেজে গিয়ে তার কক্ষে বসে দায়িত্ব পালনের পাঁয়তারা করছিলেন।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বকশীগঞ্জ উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সদস্যসহ সাধারণ জনতার মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক কলেজে ছুটে যান কলেজ প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের দুইবারের দাতা সদস্য মোফাখখার হোসেন খোকন ও আব্দুল্লাহ আল সাফি লিপন। অধ্যক্ষের দায়িত্বে থেকে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষকে পদত্যাগ করতে বলেন তারা। এ সময় অধ্যক্ষ রেগে গিয়ে মোফাখখর হোসেন খোকন ও আব্দুল্লাহ আল সাফি লিপনকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।
খবর পেয়ে দৈনিক মানবকণ্ঠের জামালপুর প্রতিনিধি, রাঙা পলাশের সম্পাদক ও প্রকাশক, জামালপুর প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ সাংবাদিক কাফি পারভেজসহ কয়েকজন সাংবাদিক কলেজে ছুটে যান। অধ্যক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার তথ্য জানতে চাইলে সাংবাদিক কাফি পারভেজের ওপরও ক্ষেপে যান অধ্যক্ষ। তাকেও দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে দ্রুত কলেজ ত্যাগ করেন অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদার।
এরপর অধ্যক্ষ বকশীগঞ্জ থানায় গিয়ে সাংবাদিক কাফি পারভেজ, মোফাখখার হোসেন খোকন ও আব্দুল্লাহ আল সাফি লিপনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ লিখে বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ খানের কাছে লিখিত অভিযোগ করে আইনগত সহযোগিতা চেয়েছেন।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়োগবাণিজ্যের অভিযোগ থাকা এবং বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদে থেকেও আত্মগোপনে থাকা বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় প্রভাবশালী নেতাদের লেলিয়ে দেওয়া কতিপয় সুবিধাভোগী লোকজন অধ্যক্ষকে তার স্বপদে বহাল রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মুজিব আদর্শ ও সদ্যক্ষমতাচ্যূত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আদর্শের মনোভাব নিয়ে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের আমলেও অধ্যক্ষের পদটি টিকিয়ে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। তার দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়োগবাণিজ্যের মতো অপরাধ ঢাকতে উল্টো সাংবাদিক কাফি পারভেজসহ তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে হুমকি দেওয়াকেও ভালো চোখে দেখছেন না অনেকেই।
সাংবাদিক কাফি পারভেজ এ প্রতিবেদককে বলেন, অধ্যক্ষের দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়োগবাণিজ্যের মতো অপরাধসহ নারী ঘটিত নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন উপস্থিতরা। এ সকল বিষয়ের তথ্য চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এ ব্যাপারে তিনি থানায় অভিযোগ দাখিল করবেন বলে জানান।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ খান এ প্রতিবেদককে বলেন, অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদার থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। তার অভিযোগের বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
এদিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে নতুন অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সারাদেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে সরকার। কিন্তু খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজের ছাত্রীদের পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অধ্যক্ষের অনুপস্থিতি ও ক্ষমতাচ্যূত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া সারাদেশের আওয়ামীমনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জোরালো দাবি উঠেছে। জামালপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ইতিমধ্যে আওয়ামীমনা প্রভাবশালী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা নিজেদের দুর্নীতি ও অপকর্মের দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করতে শুরু করেছেন। কোথাও কোথাও এ নিয়ে নানা অপ্রতিকর ঘটনাও ঘটছে। ফলে এর রেশ খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজেও পড়েছে। এতে করে কলেজটির শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ছাত্রীরা কলেজেও আসছে না। তারা তাদের আবাসিক হলে উঠতেও নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এ নিয়ে ছাত্রীদের অভিভাবকদের মাঝেও ভয়ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করায় তারা তাদের মেয়েদের কলেজে পাঠাতে পারছেন না। অধ্যক্ষের পদত্যাগ ও তাকে আইনের আওতায় এনে ছাত্রীদের পাঠদানসহ কলেজের প্রশাসনিক কাজকর্মে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জোরালো দাবি উঠেছে।