জানা গেছে, নারী শিক্ষার প্রসারে ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বকশীগঞ্জ খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজটি। এই কলেজে বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণিতে প্রায় দেড় হাজার ছাত্রী রয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে উপাধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু উপাধ্যক্ষের পদটি কলেজ স্থাপিত হওয়ার পর থেকেই শূন্য রয়েছে। উপাধ্যক্ষ না থাকলে জনবল কাঠামো ২০১৮-এর ১৩ ধারা অনুযায়ী পরবর্তী জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে কোনো জ্যেষ্ঠ শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন না। ফলে সিনিয়র শিক্ষক দায়িত্বে না থাকায় এই বিদ্যাপীঠ অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।
কলেজে সরেজমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা গেছে, কলেজের অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদার আগস্ট মাসের শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভয়ে কলেজে আসেন না। অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন কাজকর্মে ঢিলেঢালাভাবে চলছে। সে সঙ্গে প্রশাসনিক কাজকর্মে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। অনেক প্রশাসনিক জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কেউ। শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ ও বিভিন্ন কাগজপত্রে সই করাসহ গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে স্বাক্ষর আটকে আছে। অধ্যক্ষ কর্তৃক কলেজ পরিচালনা পর্ষদে আত্মীয়করণ করায় কলেজ পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈধ-অবৈধ আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিও বেশ আলোচিত হচ্ছে।
একের পর এক দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও কথায় কথায় অধীনস্তদের হুমকি-ধামকি দিয়ে অচল করে রেখেছেন কলেজের প্রশাসনিক বিভাগ। এতে করে স্থবির হয়ে পড়েছে কলেজের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারীর অভিযোগই নয়, কলেজের প্রশাসনিক সকল নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একছত্র আধিপত্য বিস্তার করে কলেজ পরিচালনা করে আসছেন অধ্যক্ষ। কলেজের অধ্যক্ষ কোথাও ছুটি বা অফিসিয়াল কাজে অন্যত্র গেলে তার অবর্তমানে জ্যেষ্ঠ কোনো শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়ে যাওয়ার নিয়ম থাকলেও অধ্যক্ষ এ নিয়ম মানতে নারাজ। আগস্ট মাসের প্রথম থেকেই তিনি কোনো প্রকার ছুটি না নিয়ে কাউকে কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে কোথায় অবস্থান করছেন সঠিক কেউ বলতে পারছেন না। কলেজ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার অসুস্থতার বিষয় উল্লেখ করেন বলে জানান একজন প্রভাষক। এ ছাড়াও অধ্যক্ষ তার অনুসারীদের নিয়ে নিজের অপকর্ম ঢাকার জন্য দফায় দফায় বিভিন্ন জায়গায় গোপন বৈঠক করছেন বলে জানা গেছে।
অভিভাবক বা শিক্ষার্থীরা কোনো প্রয়োজনে অধ্যক্ষের খোঁজে কলেজে গেলে তার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এ ছাড়াও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করায় তাদের মাঝেও চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এমন নানামুখী অনিয়মে দীর্ঘদিন ধরেই অধ্যক্ষের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা।
৮ আগস্ট উচ্চ মাধ্যমিক প্রথমবর্ষের ক্লাস শুরু হলেও অনেক শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্রীরা কলেজে আসছেন না বলেও জানা যায়। এদিকে ছাত্রী হোস্টেল সংলগ্ন কলেজ প্রাচীর মেরামতের নামে ভাঙা হলেও এখনও প্রাচীর মেরামত না করায় ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। ফলে অবিভাবকেরা তাদের মেয়েদের ছাত্রী নিবাসে রাখছেন না। এছাড়াও রাতে কোনো পাহারাদার না থাকায় কলেজ হয়ে পড়েছে অরক্ষিত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বকশীগঞ্জ উপজেলার প্রধান উপদেষ্টা সরকার রাসেল এ প্রতিবেদককে বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে এ কলেজের শিক্ষক-ছাত্রী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে বাধা প্রদান, হুমকি-ধামকিসহ নানা ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রসাশনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও কতিপয় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দাখিল করেন কলেজ অধ্যক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমান অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদার কলেজে ২০১৫ সালে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছেন। অধ্যক্ষের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে কলেজের লেখাপড়ার মান কমে যাওয়াসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজের পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাকে শুধু পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষের অনুপস্থিতে কোনো জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে দায়িত্বে দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মো. বজলুল করিম তালুকদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।(সূত্র:বাংলারচিঠিডটকম)