আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আযহা। এই ঈদে চাঁদ দেখা নিয়ে ঈদুল ফিতরের মতো আগের দিনের দোদুল্যমানতা নেই। আগেই নির্ধারিত হয়েছে ঈদের তারিখ। ২ সেপ্টেম্বর শনিবার বা ১০ জিলহজ। এখন কেবল রাত পোহানোর প্রতীক্ষা।
সমগ্র মুসলিম জাতির কাছে দুটি দিন বিশেষ আনন্দময়। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। বাংলাদেশে ঈদুল আযহাকে কোরবানির ঈদ বলা হয়ে থাকে। ঈদুল আযহার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোরবানি। কোরবানি শব্দটি এসেছে ‘কুরব’ থেকে– যার অর্থ নৈকট্য, সান্নিধ্য ও নিকটবর্তী হওয়া। অন্যদিকে, কোরবানি শব্দের অর্থ উৎসর্গ। পারিভাষিক অর্থে ‘কোরবানি’ ওই মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়। প্রচলিত অর্থে ঈদুল আযহার দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরঈ তরীকায় যে পশু জবাই করা হয়,তাকে ‘কোরবানি’ বলা হয়। সকালে রক্তিম সূর্য উপরে ওঠার সময়ে ‘কোরবানি’ করা হয় বলে এই দিনটিকে ‘ইয়াওমুল আযহা’ বলা হয়ে থাকে। কোরবানি মুসলমানদের জন্য একটি ধর্মীয় ইবাদত। জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে এই ইবাদত পালন করতে হয়। ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্যই কোরবানি আবশ্যকীয়।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে কোরবানির প্রচলন শুরু। হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিমরা প্রতি বছর জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ লাভের জন্য হালাল পশু কোরবানি করে থাকে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ইব্রাহীম(আঃ) কে স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানি করার নির্দেশ দেন। এই আদেশ অনুযায়ী হযরত ইব্রাহিম(আঃ)তার সবচেয়ে প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করার জন্য প্রস্তুত হলে আল্লাহ তাকে তা করতে বাঁধা দেন এবং পুত্রের পরিবর্তে পশু কোরবানির নির্দেশ দেন। এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিমরা প্রতি বছর এই দিবসটি পালন করে।
শরীয়াত অনুযায়ী যে মুসলমানের যাকাত দেওয়ার সামর্থ্য আছে তাঁর ওপর ঈদুল আযহা উপলক্ষে পশু কোরবানি করার নির্দেশ রয়েছে। শরীয়তের পরিভাষায় সামর্থবান মুসলমান তথা মালে নেসাবের অধিকারী মুসলমানের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। তবে যে কোনো মুসলমান কোরবানি করতে পারে তবে সেটা তার জন্য বাধ্যতামুলক নয়। তবে কোরবানি করাই এই দিনের উত্তম ইবাদত বলে ধর্মীয়ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ঈদুল আযহার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুইদিন পশু কোরবানির জন্য নির্ধারিত।
কোরবানির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর আদেশ পালন করা। এক্ষেত্রে মানুষের প্রশংসা কুড়ানো এবং লৌকিকতার কোনো অবকাশ নেই। তাই কোরবানির মধ্যে সেই মানসিকতাই কার্যকর থাকতে হবে, যা পবিত্র কোরআনে এভাবে বিধৃত হয়েছে ‘(হে নবী) বলে দাও, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ, সবই আল্লাহতায়ালার জন্য। যিনি জগতগুলোর প্রতিপালক। (সুরা আনআম ,আয়াত–১৬২)। এ প্রসঙ্গে সুরা কাউসারের দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘সুতরাং তুমি নিজ প্রতিপালকের (সন্তুষ্টি অর্জনের) জন্য নামাজ পড় এবং কোরবানি দাও’।
মূলত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে দৈন্য, হতাশা তা দুরীকরণের জন্য ঈদুল আযহার সৃষ্টি হয়েছে। যারা অসুখী এবং দরিদ্র তাদের জীবনে সুখের প্রলেপ দেওয়া এবং দারিদ্রের কষাঘাত দূর করা প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলমানদেরই কর্তব্য। সকলেরই সেসব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে হয়, ‘তোরা ভোগের পাত্র ফেলরে ছুঁড়ে, ত্যাগের তরে হৃদয় বাঁধ’। আমাদের মধ্যে বিদ্যমান পশু প্রবৃত্তি, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা জাতীয় নেতিবাচক প্রবৃত্তিকে সরিয়ে ফেলে সহজ–সরল মানবিক গুণাবলী অর্জন করাই হচ্ছে ঈদুল আযহার তাৎপর্য।
পবিত্র ঈদুল আযহায় আমাদের প্রার্থনা, আল্লাহপাক যেন বিশ্ব মুসলিমের জাতীয় জীবনকে মর্যাদাশীল করেন, সবার জীবন আনন্দময় হোক। ঈদের পবিত্রতম মহিমায় ও ত্যাগের শিক্ষায় পরিশুদ্ধ হোক প্রতিটি প্রাণ। জামালপুরিয়ানের সকল পাঠকসহ আমার বন্ধু, ফেসবুকীয় বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনদের জানাই ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
search tag:
Jamalpur news, news Jamalpur, jamalpurbarta, jamalpur online, online
news, Jamalpur district, dc jamalpur, jamalpur portal, eid, edul azha, adha, editorial, editror, monon mahadee, সম্পাদকীয়, সম্পাদক, মনন মাহাদি, ঈদুল আযহা, জামালপুরের খবর, জামালপুর খবর, জামালপুর বার্তা, বাংলারচিঠি, জামালপুর
জেলা, খবর, ধর্ম, ইসলাম, মুসলিম, জামালপুর পোর্টাল,
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন!