আপনাকে স্বাগতম!

আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ।

মনন মাহাদিকে জানি


মনন মাহাদির জন্ম ১৯৯০ সালের ১১ নভেম্বর (সনদে ১১ ডিসেম্বর) জামালপুর জেলার সদর উপজেলায়। বাবা সাংবাদিক মোস্তফা মনজু। বর্তমানে কালের কণ্ঠ এর জামালপুর জেলা প্রতিনিধি। মা ছফুরা খাতুন। তিনি গৃহিণী। 

মনন মাহাদি তিন ভাইবোনের মধ্যে বড়। ছোট দুই বোনের মধ্যে মিথিলা জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে  বিবিএ স্নাতক শিক্ষার্থী ও মরমি জামালপুর পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।

মনন মাহাদি ২০০৭ সালে জামালপুরের বেলটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। দুই বিষয়ে (উচ্চতর গণিত ও রসায়ন) অকৃতকার্য হওয়ায় ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি ৩.১৩ পেয়ে এসএসসি অতিক্রম করেন।

অতি নিম্ন জিপিএ পাওয়ার কারণে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে পড়ার ইচ্ছা তার পূরণ হয় না। তিনি নান্দিনা শেখ আনোয়ার হোসেন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। তবে কলেজে মনন মাহাদির কোনোই অগ্রগতি দেখা যাচ্ছিল না। তার বাবা ২০০৯ এর সেপ্টেম্বরে জামালপুরের বেসরকারি পলিটেকনিক জামালপুর ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (জিস্ট) এ চার বছর মেয়াদি কম্পিউটার প্রকৌশল টেকনোলজিতে ভর্তি করিয়ে দেন।

এটিতেও মননের কোনো উন্নয়ন হয় না। ডিসেম্বরের মধ্যেই বাদ দিয়ে দেন। তার মধ্যে রাজ্যের হতাশা ভর করে বসে। তারপর তিনি তাদের পারিবারিক ব্যবসা তেরেসা ডটকমে কাজ করা শুরু করেন। তার বাবার কাজেও তিনি সহযোগিতা করতেন।

২০১০, ২০১১ সালটি মননের মনো-সামাজিক উন্নয়নে আরও ব্যাঘাত সৃষ্টি করে ফেলে। মনন মনে মনে ভাবেন ২০০৮ সালে এসএসসি পাসের পর সুরুজ্জামান স্যার যে শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজের ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শাখায় ভর্তি হতে বলেছিলেন। সেটা মানলে অতি বুদ্ধিমানের কাজ হতো। জীবনের সাথে চরম বোকামী হয়ে গেছে নাকি মননের।

মনন ভাবলেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি কোর্সে ভর্তি হবেন। বের হতেই হবে। তারপর কার কাছে যেনো শুনলেন সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি প্রাইভেট সিস্টেমে পরীক্ষা দেওয়া যায় মানবিক শাখা নিয়ে পড়ে। একাদশের মানবিক শাখার বই কিনে পড়া শুরু করলেন।

পরে আর মানবিকের বই পড়া শেষ করতে হয়নি মননের। কারণ ২০১২ এর সেশনে গিয়ে দেখলেন বেসরকারি কলেজের ব্যবসায় ব্যস্থাপনা শাখায় ভর্তি হতে বয়স ও এসএসসি পাসের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। দুইজন বন্ধু এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য তাকে বলছিলেন কিছুদিন যাবৎ। কিন্তু নিজে বিজ্ঞপ্তিতে নিয়মটা দেখে সবচে বেশি উৎসাহী হলেন।

তারপর ব্যবসা থেকে নিজের আয় করা টাকায় ২০১২ সালের জুনে শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শাখায় ভর্তি হলেন। গোলাম মোর্শেদ স্যার ও সুরুজ্জামান স্যার না থাকলে হয়তো ভর্তি তালিকায় নাম আসতো না উনার। মনন বলেন, ‘আসলে এই দুই স্যারই আমাকে এইচএসসি পাস করিয়েছেন’।

মননের মনো-সামাজিক অবস্থাটা খুবই দুর্বল ছিল। যোগাযোগের অদক্ষতাই নাকি মূল সমস্যা উনার। তাই সমাজের সাথে তাল মিলাতে পারলেন না তিনি। প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় চারবিষয়ে ফেল করে বসলেন। কিন্তু এবার তিনি নিয়মের মধ্যে বাধা পড়ে গেলেন। চারবিষয়ে ফেল করলে দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা আগেই দেওয়া যায় না। তাই মননের প্রথম বর্ষে আরেক বছর থাকতে হলো ওগুলো পাস করার জন্য। নতুন বন্ধুদের সাথেও উনার ব্যবধান হয়ে গেল।

তারপর তিন বছরে অর্থাৎ ২০১৫ সালে তিনি জিপিএ ৪.১৯ পেয়ে বের হয়ে আসেন। এখানেও আরেক বিপত্তিতে পরেছিলেন তিনি। ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্টে ফেল আসলো। পরে চ্যালেঞ্জ করা হলো। আল্লাহর রহমতে আপডেটও হলো।

আর হয়তো কিছু ভাঙিয়ে বলার নেই। কারণ বাংলাদেশের পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির নিয়মের বাইরে রয়ে গেছেন মনন তা বুঝতেই পারছেন।

তারপর মনন মাহাদি ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ/বিএসএস কোর্সে পড়া শুরু করেছেন। চার থেকে পাঁচ বছর লেগে যাবে বের হতে তিনি মনে করছেন। বের হলে বাংলায় মাস্টার্স করার ইচ্ছা আছে তার। পুরাটা সুযোগ পাওয়ার উপর নির্ভর করবে বলে তিনি জানান।

প্রকৌশলী মোজাফ্ফর হোসেন পল্লীর আলো পত্রিকার স্বত্ত্ব কিনার পর সেখানে কাজের সুযোগ পেলেন মনন মাহাদি। অবশ্য তার বাবা মোস্তফা মনজু ও মাছরাঙা টিভির সাংবাদিক ও পল্লীর আলোর নির্বাহী সম্পাদক মাহফুজুর রহমান স্যারের ইচ্ছাতেই। ২০০৭ সাল থেকে ব্লগ, ইন্টারনেট, পড়াশুনা ও নিজেরও একটু আগ্রহ থাকায়- করেই দেখি না- ভরসা পেলেন। উনি মূলত অনলাইন বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন। সেই সুবাদে বার্তা বিভাগে সরাসরি কাজ করার একটি সুযোগ পান তিনি।

২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পল্লীর আলোর অনলাইন বার্তা প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট তিনি জামালপুরের অনলাইন সংবাদপত্র বাংলারচিঠি ডটকম এর বার্তা বিভাগে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি বাংলারচিঠি ডটকমেই কর্মরত আছেন।

সার্টিফিকেট কোর্সের মধ্যে তিনি কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে ছয়মাসের সনদ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনিস্টিটিউটের চারমাস মেয়াদী কোর্সে ‘সার্টিফিকেট অন বেসিক জার্নালিজম’ সনদ অর্জন করেন।

গল্প পড়তে বেশি ভালোবাসেন মনন। শেখার ও লেখার চেষ্টাও করেন। উনি বলেন, ইচ্ছে আছে ছোটগল্প নিয়ে কিছু করার। কিন্তু নিজের কাছেই মনে হচ্ছে সময় লাগবে। কারণ আমার মধ্যে শূন্যতাটা বেশি। যখন দেখবো বুঝবো শূন্যতা পূরণ হচ্ছে কিছুটা, আচ্ছা তখন হয়তো আলাদা করে বলতেই হবে না, সবাই দেখতেই পারবে, তাই না?
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন!

Post a Comment

আগের পোস্ট পরের পোস্ট

نموذج الاتصال