গত সপ্তাহে পড়লাম সাংবাদিক আমীন আল রশীদের বই ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম: জনআস্থার দোলাচল’। এটি আগেও একবার পড়েছি। এটা দ্বিতীয় বার।
গণমাধ্যমের নানা বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের অনেক জিজ্ঞাসা থাকে যা হয়তো তারা কখনো কোনো গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জানতে চান না। আবার স্বাধীনভাবে পেশাগত কাজ করতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীকে নানা সময় নিতে হয় নানা চ্যালেঞ্জ। এসব বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী বই ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম: জনআস্থার দোলাচল’।
সাংবাদিক আমীন আল রশীদের লেখা এই বইটিতে গণমাধ্যম বিষয়ে ১৮টি নিবন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন, ব্রেকিং নিউজ ও টেলিভিশনের টকশো নিয়ে বিতর্ক, টেলিভিশনের ভাষা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষায় গোপন বৈঠক, গোপন সংবাদ ও জিহাদী বইয়ের ব্যাখ্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে প্রকাশ্যে চুম্বন ও অন্যান্য তর্ক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও গণমাধ্যমের বিপত্তি, সাংবাদিক নির্যাতন, স্থানীয় সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ, উন্নয়ন সাংবাদিকতা এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পরে তৎকালীন রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্রের ভূমিকা নিয়েও বিশ্লেষণ রয়েছে।
নতুন করে ‘স্থানীয় সংবাদপত্র : সংকটের দোলাচল’ নিবন্ধটি ভাবালো। স্থানীয় সংবাদপত্রের বিকাশ-চ্যালেঞ্জ-উত্তরণ বিষয়ে সাংবাদিক আমীন আল রশীদ ২০০৩-০৪ সালে একটি গবেষণা করেন। ওই গবেষণায় ঝালকাঠি জেলা শহর থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশ্লেষণ করা হয়। সেই সাথে তুলনামূলক বিচারের জন্য পার্শ্ববর্তী জেলা ও বিভাগীয় শহর বরিশাল থেকে প্রকাশিত তিনটি পত্রিকাও বিশ্লেষণ করা হয়। এই নিবন্ধটি সেই গবেষণারই সারসংক্ষেপ।
তিনি এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করেছেন- ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন সহজলভ্য হওয়ায় স্থানীয় পর্যায় থেকে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল চালু হয়েছে। এসব অনলাইন পোর্টালের বিষয়বস্তু, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, পাঠকপ্রিয়তা, আর্থিক কাঠামো ইত্যাদি নিয়ে ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই গবেষণা হবে। এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, নীতিমালার আওতায় না আসায় এখনও এসব অনলাইন সংবাদপত্র ওই অর্থে পেশাদার হয়ে ওঠেনি এবং খবরের চেয়ে বিভ্রান্তি, গুজব ও নানারকম ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধিই এসব কথিত সংবাদপত্রের মূল কাজ বলে মানুষ বিশ্বাস করে।
যাই হোক, ওই গবেষণাতে সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনার পরে ঝালকাঠি থেকে কোনো সংবাদপত্র বিকশিত হতে না পারার পেছনে সুনির্দিষ্টিভাবে কিছু কারণ উঠে এসেছে। তা হলো- ১. অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার অভাব, ২. বিজ্ঞাপন সংকট, ৩. রাজনৈতিক চাপ, ৪. ঝালকাঠি ও বরিশালের মধ্যে কম দূরত্ব(প্রতিদিন খুব সকালেই বরিশাল শহর থেকে পত্রিকা ঝালকাঠিতে চলে আসে), ৫. বিষয়বস্তুর মান, ৬. এলাকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাহিদা নির্ধারণে ব্যর্থতা, ৭. পাঠকদের জানার আগ্রহের সীমাবদ্ধতা ও পত্রিকার গুণগত মান, ৮. স্থানীয়দের আন্তরিকতার অভাব ও ৯. নীতিমালার অভাব।
যদিও সংকট থেকে উত্তরণ খুব একটা সহজ নয় তারপরও সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষের সাথে কথা বলে কিছু সুপারিশ পেয়েছেন তিনি। সেটাও এখানে উল্লেখ করেছেন।
উন্নয়ন সাংবাদিকতার বিষয়ক নিবন্ধে উল্লেখিত একটি কোট দিয়ে শেষ করছি।
‘আমাদের গণমাধ্যমগুলোতে যা পরিবেশিত হয় তার ভেতরে গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা-দুঃখ-দৈন্য প্রতিফলিত হয় না। দ্বিতীয়ত এই গণমাধ্যমগুলোতে যা পরিবেশিত হয় তা ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে পারে না’ : গণবিচ্ছিন্ন গণমাধ্যম, অধ্যাপক আলী রীয়াজ