আপনাকে স্বাগতম!

আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ।

ব্রহ্মপুত্র সেতুতে শিশুদের ঈদ আনন্দ

শিশুরাই পারে প্রকৃতির সাথে মুহূর্তে মিশে যেতে। প্রাকৃতিক নির্মল পরিবেশ সবাইকে টানে। শিশুদের হয়তো একটু বেশিই টানে। পবিত্র ঈদ এলেই প্রতিবছর শেরপুর-জামালপুর ব্রহ্মপুত্র সেতুতে, সেতুর নিচে এবং নদের পানিতে, তীরে শিশুরা ছুটে যায়। নদের পানি, নির্মল আলোবাতাস, গাছের ছায়া, নৌকা ছাড়া আর কি-ইবা আছে সেখানে। কিন্তু এরকম জায়গা শিশুদের কাছে যেন প্রাণের জায়গা।

ব্রহ্মপুত্র সেতুর নিচে নাগরদোলায় শিশুদের ভিড়। ছবি : শাহরিয়ার
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের জামাতের পর থেকেই শত শত শিশুরা ছুটে আসছে ব্রহ্মপুত্র সেতুতে। সবার পরনেই বাহারি নকশা ও রঙের ঈদের নতুন জামা, জুতা। প্রচন্ড রোদের তাপে জ্বলছে বাতাস। কিন্তু শিশুদের কোনো ক্লান্তি নেই। সেতুর নিচে বসেছে নাগরদোলা, চটপটি, হালিম, শরবত, চিংড়ি মাছের বড়া, শিশুদের খেলনা সামগ্রীসহ বিভিন্ন ভাসমান খুদে দোকান। শিশুরা দলবেঁধে খাচ্ছে শরবত, হালিম কিংবা চটপটি। অনেকেই এই ভরদুপুরে ডিঙি নৌকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। যারা এসেছে তাদের বয়স সাত বছর থেকে তের-চৌদ্দ বছরের মধ্যে। অনেকের হাতে দেখা যায় স্মার্টফোন। সেলফি তুলছে। আনন্দ খুশির যেন সীমা নেই। নাগরদোলা খেতে শিশুদের অপেক্ষার পালা চলছে। ঘুরছে নাগারদোলা। সাথে শিশুদের চিৎকার চেঁচামেচি, হৈহুল্লুর আনন্দে পুরো সেতু এলাকা মুখরিত। শিশুদের সাথে অভিভাবকদের দেখা যায়নি খুব একটা। সেতুর টানে বাসা, বাড়ি, এলাকা থেকে দলবেঁধে বেরিয়ে এসেছে শিশুরা। ভরদুপুরেই দেখা গেল শিশুদের এই উল্লাস। চলবে সন্ধ্যার গোধুলিবেলা পর্যন্ত। বিকেলে বাড়বে আরও ভিড়। বিকেলে শিশুদের সাথে দলে দলে যুক্ত হবে তরুণ-তরুণীরা।

দড়িপাড়া থেকে শাহরিয়ার ও তার কয়েকজন বন্ধু এসেছে সেতুর নিচে। এসেই তারা শরবতের বোতল কিনে পান করে হয়তো শরীরটাকে চাঙ্গা করে নিলো। শাহরিয়ারের সাথে কথা বলতে চাইলে এ প্রতিবেদকের দিকে তার কোনো মনোযোগ নেই। বোঝা গেল শিশুরা এমনই স্বাধীনচেতা হয়ে থাকে। এককথা দুকথা শেষে এক পর্যায়ে শাহরিয়ার যুক্ত হলো এই প্রতিবেদকের সাথে। শাহরিয়ারের স্মার্টফোনে শিশুদের আনন্দ উৎসবের কিছু ছবি উঠে গেলো। সেখান থেকে এই প্রতিবেদকের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে চলে গেল ছবিগুলো। শাহরিয়ার বললো, আপনি কি করবেন ছবিগুলো দিয়ে। সংবাদের সাথে ছবি যাবে বলতেই শাহরিয়ার আরও গুরুত্ব দেওয়া শুরু করলো। তারপরও বোঝা গেল শাহরিয়ারের মনোযোগ ঘুরে বেড়ানোয়।

শিশুদের ঈদের আনন্দ কোলাহলে ভরে যায় ব্রহ্মপুত্র সেতু এলাকা। ছবি : শাহরিয়ার
বানিয়াবাজার থেকে এসেছে শিশু সীমা আক্তার। তার সাথে আরও চার-পাঁচজন। তাদের বয়স সর্বোচ্চ ১২ বছরের মধ্যে। সীমা আক্তার বললো, আমরা প্রত্যেকবার নদীরপাড়ে আসি। ঘোরাঘুরি করি। ভালই লাগে। বাসায় খুঁজবে কি না জানতে চাইলে সে আরও বললো, মাকে বলে এসেছি। শহরের শাহপুর থেকে এসেছে শামীম ও তার পিচ্চি বন্ধুরা। শামীম বললো, আমরা আইছি নাগরদোলা খাইতে। আজকে অটোভাড়া বেশি চায়। তাই আমরা হাইটা আইসা পড়ছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকমু। আশা, কবির, আলপনা ওরা খাচ্ছে হালিম। হালিম খাওয়ার পর তোমরা কি করবা জানতে চাইলে কবির বললো, এইখানে আমগরে ভাললাগে। বেড়ামু। ঘুরমু। নাগরদোলা খামু। ফুলবাড়িয়া থেকে শিশু মরমি মাথিন এসেছে তার মায়ের সাথে। জানা গেল মরমি মাথিন প্রথম এসেছে এখানে। কিছুক্ষণ রোদের মধ্যে এদিক, ওদিক ঘুরলো। সে তার মায়ের সাথে সেতুর ওপর থেকে নদী দেখেছে। সব শিশুরাই এভাবেই ব্যস্ত, ইতস্তত সময় কাটায় এখানে। দিনে দিনে ব্রহ্মপুত্র সেতু এলাকা ভ্রমণপিয়াসী মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

ব্রহ্মপুত্র তীরে বেড়াতে আসা আবুল খায়ের নামের একজন অভিভাবক বললেন, শুধু শিশুদের জন্যই নয়, বড়রাও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ছুটে আসেন। এখানে ভালো লাগে। শিশুরা যেহেতু এরকম পরিবেশ সহজেই মেনে নিতে পারে, এখানে তাদের বিনোদনের জন্য জেলা প্রশাসন কিংবা পৌরসভার নজর দেওয়া দরকার।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন!

Post a Comment

আগের পোস্ট পরের পোস্ট

نموذج الاتصال