আপনাকে স্বাগতম!

আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ।

আল্লাহয় বাছাইছে, আইজকা কি যে অইতো : ট্রেনের ধাক্কায় বিধ্বস্ত অটোর যাত্রী হেলাল উদ্দিন


‘দেখলাম ট্রেন আইসা পড়ছে। ডাইবরেরে ঝাবড়াইয়া ধইরা ফাল মাইরা কলার দোকানের উপরে পইড়া গেছি। চাইয়া দেহি অটো এককেবারে শ্যাষ, কিচ্ছুই নাই। চ্যাপ্টা অয়ে গেছেগা। আল্লাহয় বাছাইছে। আইজকা কি যে অইতো।’

কথাগুলো বলছিলেন দুর্ঘটনা কবলিত অটোর একমাত্র যাত্রী হেলাল উদ্দিন। তিনি অটো চালকের পাশেই বসে যাচ্ছিলেন। তিনি এবং ওই অটোর চালক অনেকটা নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে বেঁচে গেছেন। অটো চালকের নামটি তিনি বলতে পারছিলেন না। হেলাল উদ্দিনের বাসা জামালপুর শহরের পশ্চিম ফুলবাড়িয়া এলাকায়। তিনি খাবারের হোটেলের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জামালপুর শহরের রেলগেটে মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে আন্ত:নগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের সাথে যে দুটি অটো দুর্ঘটনায় পতিত হয় তার একটির একমাত্র যাত্রী ছিলেন এই হেলাল উদ্দিন।

হেলাল উদ্দিন মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে তার বেঁচে যাওয়ার সেই শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তের বর্ণনা দেওয়ার সময় তাকে বেশ ভীত সন্ত্রস্ত মনে হচ্ছিল। তিনি আরও বললেন, ‘অটোর ডাইবরেরে এমনিই চিনি। অর নাম জানি না। আমগরে অটোর পাশেই মনে অইলো একটি সরকারি সাদা গাড়ি আছিল। দেখলাম অই গাড়িটা ব্যাক গিয়ারো গেল। অটো সামনেও যায় না। পিছাবার সুময়ও পাইলাম না। ট্রেন আইসা পড়ছে দেইখা আমি আর দেরি করি নাই। ডাইবরেরে ঝাবড়াইয়া ধইরা ফাল মাইরা কলার দোকানের উপরে পইড়া গেছি। চায়া দেহি অটো এককেবারে শ্যাষ, কিচ্ছুই নাই। চ্যাপ্টা অয়া গেছেগা। ট্রেনে ছেচরাইয়া ছেচরাইয়া অটোরে নিয়া যাইতাছে। আল্লাহয় বাছাইছে। আইজকা কি যে অইতো।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আজ বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে দেওয়ানগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী আন্ত:নগর তিস্তা ট্রেন জামালপুর জংশন রেল স্টেশনে প্রবেশের জন্য লাইন ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয়। এ সময় সরিষাবাড়ি থেকে ময়মনসিংহগামী লোকাল ট্রেন জিএম জামালপুর স্টেশনে প্রবেশের জন্য আউটার সিগন্যালে অপেক্ষায় রাখা হয়। তিস্তা ট্রেন প্রবেশের জন্য লাইন ক্লিয়ারেন্স দেয়া হলেও জামালপুর শহরের ব্যস্ততম গেইটপাড় রেলক্রসিংএ দুই দিকের গেটব্যারিয়ারের মধ্য একদিকের গেটব্যারিয়ার নামানো ছিল। একটি গেটব্যারিয়ার নামানো না থাকায় সেটি দিয়ে যানবাহন ও পথচারীরা প্রবেশ করতে থাকে।

এ সময় আন্ত:নগর তিস্তা ট্রেন প্রবেশ করলে দুটি অটোরিকশার যাত্রী ও চালক দ্রুত নেমে প্রাণে বাঁচলেও অটোরিকশা দুটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। পরে ট্রেনের চালক ট্রেন থামিয়ে পেছন দিকে নেয় এবং দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া অটোরিকশা দুটি ট্রেনের নিচ থেকে বের করা হয়। ট্রেনের গতি কম থাকায় এবং চালক ট্রেনটি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে পারায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় যাত্রীরা। এ সময় ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে মুহূর্তের মধ্যে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে যায়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, শহরের ব্যস্ততম প্রধান সড়কের এই লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের সময় হলে দুই দিকে গেটব্যারিয়ার না নামানো, গেটম্যানের অসতর্কতা ও আশেপাশে প্রচুর অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

জামালপুর রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন সিরাজী জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রেনের নিচ থেকে অটো রিকশাটি উদ্ধার করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করেন। ট্রেনের কোনো ক্ষতি হয়নি।

এ দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মির্জা দেওয়ান শামছুল আলম জানান, আন্ত:নগর তিস্তা ট্রেনটি জামালপুর জংশন রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশের জন্য লাইন ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়। গেটম্যান একটি গেটব্যারিয়ার নামালেও অপরটি নামানোর আগেই অটোরিকশা প্রবেশ করে এবং দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় ট্রেনটির কোনো ক্ষতি না হলেও ২০ মিনিট বিলম্বে ঢাকার উদ্দেশে সেটি জামালপুর ছেড়ে যায়।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন!

Post a Comment

আগের পোস্ট পরের পোস্ট

نموذج الاتصال