আপনাকে স্বাগতম!

আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ।

স্টোরি খুঁজতে একদিন আমি, দেখি নিজেই একটি স্টোরি

২০ মার্চ মঙ্গলবার সকালে উঠেই চিন্তা করলাম স্টোরি খুঁজতে বের হবো। এই সেই করে তৈরি হতেই বেলা ১২ টা পেড়িয়ে গিয়েছিল। হাতে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নোটবুক নিয়ে আর শার্টের বোতামের সারিতে কলম গুঁজে (এই শার্টে পকেট নেই কোনো) বের হলাম।

আমাদের বাসার সামনের যে সড়ক তার নাম ভাষা সৈনিক মরহুম কালু মন্ডল সড়ক। সবাই একে পিটিআই মোড় হিসেবেই হয়তো চিনেন। কিন্তু নির্মাণাধীন রাস্তাটির কাজ শেষ হলেই ওই নামে উদ্বোধন করা হবে। যাই হোক সড়কটির সাথে জামালপুর প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট-পিটিআই এর দক্ষিণ দিকের সীমানা দেয়াল। এই সীমানা দেয়ালে রংমিস্ত্রিরা খাকি রং করছেন। তবে রকমারি ডটকমের পাঁচটি বিজ্ঞাপন তারা মুছায়নি।আমি মনে মনে নিজেই বললাম, রকমারি ডটকম তাহলে থাকলো।

হাঁটতে হাঁটতে পিটিআই ও তারপর মহিলা কলেজের সামনে দিয়ে মুনসিপাড়া সড়ক দিয়ে স্টেশনের দিকে গেলাম। ভাবলাম কাউকে পাওয়া যায় কিনা বা আলাপ করে কিছু জানা যায় কিনা। কিন্তু চারিদিকে বৈষম্যই বেশি নজরে পড়লো। কেউ ভালো ব্যবসা করছেন মুখ সর্বদা হাসি খুশি। আর কেউ কেউ উদাস হয়ে বসে আছেন।

উদাস হয়ে বসে থাকার মধ্যে একজন বৃদ্ধ লোকও আছেন। তার পাকা চুল ও দাড়ি। তিনি একটি ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্র নিয়ে বসে আছেন। পাঁচ টাকায় ওজন মাপুন - একটি মোটা কাগজে হাতে লেখা সাইনবোর্ডও পাশে রেখে দিয়েছেন।  আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে এসব দেখছিলাম। কয়েকবার লোকটির সাথে চোখাচোখিও হলো। কিন্তু বুকের ভিতর হুহু করে উঠলো। কিছু জিজ্ঞাসা করে যে কথা বের করবো আরও, সাহসহীনে মন সায় দিলো না।

নিজের মনেই ভাবলাম বৃত্তে বন্দি থাকলে পৃথিবীটা অনেক কঠিন লাগে। মুখ দিয়ে সহজে অনেক কিছু বলে দেওয়া যায়, কিন্তু বাস্তবে হাতে কলমে কাজটি আসলেই কঠিন। আপন মনে নানা কথা ভাবতে ভাবতে আর দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে স্টেশন প্লাটফরম চক্কর দিলাম। ফুট ওভারব্রিজ থেকেও চারদিক কিছুক্ষণ দেখলাম, চির বাস্তব, সবাই যার যার ধান্দায় ব্যস্ত।

নিজের কাজে নিজেই হতাশ হয়ে ফিরে আসছিলাম। গেইটপাড়ে কলেজবন্ধু লিখনের সাথে দেখা হয়ে গেল। সে এসিআই এর মার্কেটিং এ কাজ করে। সম্প্রতি জামালপুরে বদলি হয়ে এসেছে। অনেকদিন পর দেখা হলো। চা খেতে খেতে দীর্ঘক্ষণ আলাপও হলো।

সে সময় একজন বৃদ্ধা ভিক্ষুক সামনে এসে দাঁড়ালেন। সম্ভবত তিনি বোবা।মুখে হাত দিয়ে খাওয়ার ইশারা করলেন একবার আরেক বার পেটে হাত দিয়ে দেখালেন। স্পষ্টই বুঝা গেল তিনি ক্ষুধার্ত। তারপর দোকানের পাউরুটির দিকে ইশারা করলেন, তার মানে তিনি ওটি খেতে চান।

আমার কাছে টাকা সীমিত থাকে। আমি দোকানদার চাচাকে আগে জিজ্ঞাসা করে নিলাম দাম। দাম পনের টাকা শুনে আস্বস্ত হয়ে ওই বৃদ্ধার হাতে একটি প্যাকেট ধরিয়ে দিলাম। উনি চুপচাপ সেটি নিয়ে চলে গেলেন। মনে হয় আমার আচরণে খুশি হতে পারলেন না। পরে পকেট থেকে টাকা বের করে দোকানদারকে দিয়ে দিলাম। 

লিখনের সাথে আরও কিছু আলাপ করে ফিরে আসলাম। সে তার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল।

বাইরের দুনিয়া থেকে অনেকদিন হলো বিচ্ছিন্ন আছি। সংযোগটি হয়তো একদিনে হবে না। কিন্তু হুট হাট কিছু না শুরু করে ধাপে ধাপে আগানো উচিৎ। তাহলে হয়তো সব দিক ভালো হয়। তাই তো চিন্তা করছি আগে জামালপুর জেলা বিষয়ে যত বই সংগ্রহে আছে বা সংগ্রহ করা সম্ভব তা ভালো করে কয়েকবার লেখকের দৃষ্টিতে পড়বো।

এখন থেকে আমার প্রধান প্রকল্প একটাই ‘জামালপুর বিষয়ের বই’ পড়া। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যেন শূন্যতাগুলো পূরণ করতে পারি আস্তে আস্তে। 

লেখাটি পড়ার জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। সবার জীবন পাইয়ের (π) মত সুন্দর হোক।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন!

Post a Comment

আগের পোস্ট পরের পোস্ট

نموذج الاتصال