আপনাকে স্বাগতম!

আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ।

একনেকে জামালপুর-ধানুয়া কামালপুর-রৌমারী মহাসড়ক প্রকল্প অনুমোদিত


আজিজুর রহমান ডল ॥
জামালপুর জেলার সার্বিক উন্নয়নে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় ৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ জামালপুর-ধানুয়া কামালপুর-রৌমারী সড়কটিকে মহাসড়ক প্রকল্পভুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৩৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এই মহাসড়কের প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছেন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভার সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার এ প্রকল্পটির অনুমোদন দেন। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এসইসি) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই সভায় ৩ হাজার ১৭১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার যে আটটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে তার মধ্যে জামালপুরের এই মহাসড়ক প্রকল্পটি রয়েছে।

বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম মঙ্গলবার একনেকে জামালপুর-ধানুয়া কামালপুর-রৌমারী মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে এ প্রতিবেদককে বলেছেন, এই সড়কটি জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের রাজিবপুর-রৌমারী উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের নিত্যসাথী ছিল। তারা দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি প্রশস্ত করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন। জামালপুরের সাথে উত্তবঙ্গের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে সড়কটিকে মহাসড়ক প্রকল্পভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে জামালপুর-বকশীগঞ্জ-ধানুয়া কামালপুর-রাজিবপুর হয়ে উত্তরবঙ্গের সাথে সড়ক যোগাযোগের একটি নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে। ওই অঞ্চলের মানুষের জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক পথে স্বল্প সময়ে যাতায়াতের পথ সহজ হবে। সড়ক দুর্ঘটনাও কমে আসবে। সড়কপথে যাত্রীসেবার মানও বাড়বে। এছাড়াও পণ্য পরিবহন ও পেশাজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ওয়াহেদুজ্জামান প্রকল্পটি প্রসঙ্গে বলেছেন, জামালপুর-ধানুয়া কামালপুর- রৌমারী মহাসড়কের ৫৯ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ করা হবে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সড়কটি নির্মিত হবে কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার কদমতলা পর্যন্ত। এ প্রকল্পের আওতায় দুই পাশে মাটিসহ সড়কটি প্রশস্ত করা হবে ৩০ ফুট। এর মধ্যে পাকা সড়ক থাকবে ২৪ ফুট। প্রকল্পটিতে কামালপুর স্থলবন্দরে গাড়ি চলাচলের জন্য এক কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ কাজও ধরা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জামালপুরে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত মাসে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে জামালপুর জেলার ১৬টি স্কুল-কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও সংস্কার কাজের জন্য ১৩৭ কোটি ৫৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। একই মাসে জামালপুর জেলার তিনটি পৌরসভা মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও জামালপুর পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নীতকরণের প্রায় ৭৭ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। একনেকে অনুমোদিত হয়েছে ২১২ কোটি টাকার জামালপুর রেলওয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প। আন্তর্জাতিকমানের স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য ৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। জামালপুর শহরের বজরাপুর এলাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের পাশে সাড়ে ৫ একর আয়তনের জমিতে ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে হাইটেক পার্ক নির্মাণ প্রকল্পও একনেকে অনুমোদিত হয়েছে।

জামালপুর শহরকে সম্পূর্ণভাবে যানজটমুক্ত করতে ৩৩ কোটি টাকায় নির্মিত বাইপাস সড়ক চালু হয়েছে। শহরের ব্রহ্মপুত্র সেতু থেকে নদীর পার দিয়ে প্রথম পর্যায়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাইপাস সড়ক এবং জামালপুর শহরের মাছিমপুর থেকে বেলটিয়া পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। জামালপুর পৌর এলাকায় শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মাদারগঞ্জে শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট, মেলান্দহের ভাবকিতে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন প্রকল্পগুলোর কাজও শুরু হয়েছে। জামালপুর শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বৈশাখী মেলা মাঠ, দয়াময়ী মন্দির ও কাছারি শাহি জামে মসজিদ এলাকায় ২৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক চিত্তাকর্ষক সাংস্কৃতিক পল্লী গড়ে তোলার কাজও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে বেকারত্ব দূর করার লক্ষ্যে জামালপুরের দিগপাইতে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হয়েছে। সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচরে আরও একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মেলান্দহে হচ্ছে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি। মেলান্দহের মালঞ্চ এলাকায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পাওয়া গেছে। আধুনিক ডায়াবেটিক হাসপাতাল হচ্ছে। জামালপুর সদরে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। জামালপুর সদরের বিনন্দেরপাড়ায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্পের কাজ খুব শিগগিরই শুরু হচ্ছে। মাদারগঞ্জের কাজিয়ার চরে হচ্ছে ২০০ মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। লক্ষ্য রয়েছে ২০১৮ সালের মধ্যে জেলার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার।

এছাড়াও জামালপুর পৌরসভার সেবার মান বাড়াতে নানা পরিকল্পনা ও প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। বাঁকাতেরা সোজা করে জামালপুর-মুক্তাগাছা আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ, জামালপুর-গাজীপুর রুটে ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণসহ সারা জেলার আরও অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এভাবে জামালপুরকে উন্নয়নের রোল মডেল এবং বহুমাত্রিক উন্নয়নের স্রোতধারায় উদ্ভাসিত করতে কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ জেলার সার্বিক উন্নয়নে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

লেখক পরিচিতি : আজিজুর রহমান ডল , জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক জনকণ্ঠের সাংবাদিক।

ফিচার ছবি সূত্র: আলী আকবর
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন!

Post a Comment

আগের পোস্ট পরের পোস্ট

نموذج الاتصال