রেলের টিকিটে কালোবাজারী ও অনিয়ম রোধ এবং নতুন আন্ত:নগর ট্রেনসহ মোট ১৮ দফা দাবি নিয়ে স্বচ্ছতার জন্য নাগরিক-স্বজন, সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক ও টিআইবি’র উদ্যোগে জামালপুরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে শহরের দয়াময়ী মোড়ে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক এর সভাপতি অধ্যাপক মীর আনসার আলীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে রেলের অব্যবস্থাপনা দূরীকরণ ও যাত্রীদের দুর্ভোগ লাগবে ১৮ দফা দাবি উপস্থাপন করেন স্বজনের সমন্বয়কারী রাসেল মিয়া।
দাবিগুলো হলো:
১. টিকিট কালোবাজারী রোধে ও ট্রেনের আসন সংকট লাঘবে জামালপুর লাইনে আরো দ্ইুটি নতুন আন্তঃনগর ট্রেনের ব্যবস্থা করতে হবে;
২. দেশের উল্লেখযোগ্য সর্বোচ্চ্য যাত্রী বহনকারী জেলাগুলোর একটি জামালপুর, তাই জামালপুর-ঢাকা লাইনের উনড়বয়ন করে দ্রুত গতির ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে;
৩. জামালপুর-ঢাকা লাইনে সকাল ৮টা থেকে ১২টার মধ্যে ২টি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে;
৪. যেখান থেকে আয় বেশি সেখানে সেবা বেশি এই নীতির উপর ভিত্তি করে আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেনের আসন সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং জামালপুর স্টেশনে কর্মকর্তা কর্মচারীদের শূণ্য পদ দ্রুত পূরণ করতে হবে;
৫. পরিবর্তনের নামে অন্য লাইনের নষ্ট/বাতিলকৃত বগি জামালপুর লাইনে দেয়া বন্ধ করতে হবে;
৬. টিকিট কালোবাজারী বন্ধ করার জন্য জিআরপিসহ স্টেশন কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে এবং অবিক্রিকৃত টিকিট সংখ্যা দেখানোর জন্য ডিসপ্লে ব্যবস্থা চালু করতে হবে;
৭. স্টেশনের প্লাটফর্ম থেকে অবৈধ স্থাপনা এবং হকারদের উচ্ছেদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
৮. যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য বিশ্রামাগার সার্বক্ষনিক খোলা রাখতে হবে এবং পর্যাপ্ত আসন ও সার্বক্ষনিক আয়ার ব্যবস্থা করতে হবে;
৯. পাবলিক টয়লেট পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে;
১০. প্লাটফর্মে যাত্রীদের বসার জন্য অধিক সংখ্যক চেয়ারের ব্যবস্থা করতে হবে;
১১. স্টেশনে যাত্রীদের জন্য নিরাপদ পানির সরবরাহ করতে হবে;
১২. পাবলিক এড্রেসিং- এর মাধ্যমে স্টেশনের পরিচ্ছন্নতা এবং ট্রেনের অবস্থান সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য প্রদান করতে হবে;
১৩. চলমান ট্রেন সমূহের ইঞ্জিন ভাল করে মেরামত বা নতুন ইঞ্জিন প্রদান, বগিগুলো পর্যায় ক্রমে মেরামত এবং ব্যবহার অনুপোযোগী বগিসমূহ বাতিল করে নতুন বগিসংযোজন, দুর্ঘটনা এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ জানালা মেরামত, পর্যাপ্ত বাতি এবং ফ্যানগুলো সার্বক্ষণিক সচল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে;
১৪. ট্রেন ও প্লাটফর্মে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করতে হবে;
১৫. খাবার বগিতে বৈচিত্রপূর্ণ মানসম্মত খাবার পরিবেশন করতে হবে;
১৬. ঢাকা-জামালপুর হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেন চালু করতে হবে;
১৭. জয়দেবপুর-বাহাদুরাবাদ এবং জয়দেবপুর-তারকান্দি হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর সংযোগ লাইন ডাবল লাইনে দ্রুত উন্নীত করতে হবে;
১৮. ঢাকা-বাহাদুরাবাদ, ঢাকা-তারাকান্দি, ময়মনসিংহ-বাহাদুরাবাদ, ময়মনসিংহ-তারাকান্দি লাইনে লোকাল ট্রেনের বগি বৃদ্ধি করতে হবে।
মানববন্ধনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবি ইউসুফ আলী বলেন, রেল লাইন উন্নয়নের জন্য শত কোটি টাকা খরচ করা হলেও গত ২৮ বছরে জামালপুর জেলার জন্য নতুন কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয় নাই। ফলে এই লাইনে নতুন আন্ত:নগর ট্রেন দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
সনাক এর সভাপতি অধ্যাপক মীর আনছার আলী বলেন, সেবার মান বৃদ্ধি ও অনিয়ম রোধে জামালপুরে সনাক অনেকদিন যাবৎ কাজ করছে এবং বিভিন্ন সময় এর কিছু সুফলও পাওয়া গিয়েছে। তবে তিনি বলেন, টিকিট কালোবাজারী দূর করতে এর আগেও কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোনো ফল পাওয়া যায় নাই। এটি বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের নজর দিতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। দাবির সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, দুইটি নতুন আন্ত:নগর ট্রেন চালু করা হলে জামালপুরের যাত্রীসাধারণ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন সনাক সদস্য অধ্যাপক এসএম কায়েদ-উদ-জামান, জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিক জামান, ইকবালপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তামান্না সালেহিন কবিতা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন খান, অপরাজেয় বাংলাদেশের আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।
মানববন্ধনে সনাক, স্বজন, ইয়েস, ইয়েস ফ্রেন্ডস সদস্য ছাড়াও সাংবাদিক, আইনজীবি, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন!